বুধবার, ১১ জুলাই, ২০১২

এই কবিতাটির নাম জানিনা, অনেক আগে এক বিজ্ঞ আলেমের কাছে থেকে শুনেছিলাম, আপনাদের কারো জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন...


-কবি কাজী নজরুল ইসলাম
তাওহীদের হায় চির সেবক
ভুলিয়া গিয়াছো সে তাকবীর
দূর্গা নামের কাছাকাছি প্রায়
দরগায় গিয়া লুটাও শীর

ওদের যেমন রাম নারায়ণ
মোদের তেমন মানিক পীর
ওদের চাউল কলার সাথে
মিশিয়া গিয়াছে মোদের ক্ষীর

ওদের শিব শিবানির সাথে
আলী ফাতেমার মিতালী বেশ
হাসানরে করিয়াছি কার্তীক আর
হোসেনরে করিয়াছি গজ গনেশ

বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে
মোরা আছি বসে
বিবি তালাকের ফতওয়া খুজেছি
কোরাণ হাদীছ চষে

হানাফী শাফেয়ী মালেকী হাম্বলী
মিটেনি তখনও গোল
এমনি সময় আজরাইল এসে
হাকিলো, তলপি তোল

বাহীরের দিকে যত মরিয়াছি
ভীতরের দিকে তত
গুনতিতে মোরা বাড়িয়া চলেছি
গরু ছাগলের মত;

শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১২

সিয়াম (রোযার) সম্পর্কে জরুরী কয়েকটি মাসআলাহঃ

১। নাপাক অবস্থায় সকাল হয়ে গেলে সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না। জাগ্রত হওয়ার পর গোসল করে সলাত আদায় করতে হবে। (মুসলিম হাঃ ১৮১০)

২। সিয়াম পালনকারী যদি ভূলক্রমে খায় বা পান করে তবে সে তার সওম (রোজা) পূর্ণ করবে। কেননা আল্ল-হ তা‘আলাই তাকে আহার করিয়েছেন ও পান করিয়েছেন। (বুখারী হাঃ ১৭৯৫)

৩। ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে সিয়াম ভেঙে যায়। (আবু দাউদ হা: ২৩৭২, মিশকাত হা: ১৯১০)

৪। ‘আয়িশাহ্ (রাযি,) হতে বণিত। রসূল (স:) বলেছেন: রমাযানের (রোজা) কাযা দায়িত্বে থাকা অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তার পক্ষ হতে তার অভিভাবকগণ সিয়াম পালন করবে। মুসলিম হা: ২৫৫৯, আবু দাউদ হা: ২৩৯২

৫। গর্ভবতী মেয়ে অথবা স্তন্য দায়িনী ‘মাতার’ যদি বেশী অসুবিধা হয় তবে সিয়াম ভঙ্গ করবে। অন্য সময় তা কাযা করে নিবে। অধিক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সিয়াম করতে না পারলে একটা লোককে তিন বেলা অর্থাৎ ইফতার, সন্ধ্যা রাতে ও সাহরী খাওয়াবে। অসুস্থ ব্যক্তির যদি আরোগ্য হওয়ার আশা না থাকে, তবে তার পক্ষ হতে ঐ নিয়মে খাওয়াবে। আর সাধারন অসুখ হলে রোগ মুক্তির পরই সে নিজেই তা কাযা করে নিবে- এটাই কুরআনের বিধান। (রোজা ও তারাবীহ- শাইখ আবু মোহাম্মদ আলীমুদ্দীন নদীয়াভী, ১১-১২ পৃষ্ঠা)

৬। সিয়াম অবস্থায় নাকে ঔষধ দেয়া কন্ঠনালীতে ঔষধের স্বাদ অনুভূত হলে চোখে বা কানে ঔষধের ফোঁটা দেয়া বা জখমে ঔষধ ব্যবহারে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। (সহীহুল বুখারী-তর্জামানুল বাব, ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড)

৭। সিয়াম অবস্থায় সুরমা, আতর, তৈল ব্যবহার করা যাবে।

৮। দাঁতের মাড়ির রক্ত থুথুর সাথে পেটে গেলেও অসুবিধা নেই।

৯। রোযাদার কুলি করে মুখের সব পানি ভাল করে ফেলে দেয়ার পর যদি থুথু এবং মুখের ভেতর যা ছিল তা গিলে নেয় তাতে কোন অসুবিধা নেই।

১০। শ্বাসকষ্টের কারনে ¯েপ্র (নেবুলাইজার) ব্যবহার করতে পারবে।

১১। সিয়াম পালনকারীর ওযুর প্রাক্কালে কুলি অথবা নাকে পানি দেয়ার সময় অসতর্কাবশত পানি পেটে প্রবেশ করলে তাতে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। কেননা তার এ পানি সেবন অনিচ্ছাকৃত হয়েছে।

১২। সিয়ামরত অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করাতে কোন দোষ নেই।

১৩। প্রয়োজনে রান্না করার সময় খাবার চাখলে বাচ্চাকে খাবার চিবিয়ে দিলে সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না।

১৪। সুরমা, টুথপেস্ট ও মাজন ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়।

১৫। রোযাদারের থুথু গিললে কোন আপত্তি নেই।

১৬। নাক, কান, দাঁত  অথবা শরীর কোন অংশ কেটে রক্ত বের হলেও সিয়াম নষ্ট হবে না।

(সূত্রঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ওয়াল ঈমান)

আল-কুরআন অর্থসহ পড়া কেন জরুরী?

বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম

কুরআন বুঝা সহজ : “আমি কুরআনকে বুঝার জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব কোন চিন্তাশীল আছে কি?” (সূরা কামার, ৩২)

কুরআন ধীরে ও সহীহ করে পড়তে হবে : “ ধীরে ধীরে সহীহ শুদ্ধ করে কুরআন তিলাওয়াত কর।” (সূরাহ মুয্যাম্মিল, ৪)

কুরআন তিলাওয়াতে ঈমান বৃদ্ধি পায়: “প্রকৃত ঈমানদার তো তারাই যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে কেঁপে উঠে। আর আল্লা-হর আয়াত যখন তাদের সামনে তিলাওয়াত করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়।” (সূরাহ আনফাল, ২)

কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শীর মর্যাদা ও কুরআন ঠেকে ঠেকে পড়ার সাওয়াব: আয়িশাহ্ (রাযি,) বলেছেন, কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী ব্যক্তি ঐ সব (মালায়িকাদের) ফেরেশতাদের শ্রেণীভূক্ত যারা মহাপূণ্যবান এবং লিখার কাজে লিপ্ত। আর যে ব্যক্তি অতি কষ্টে ঠেকে ঠেকে কুরআন পড়ে সে দ্বিগুণ সাওয়াব পাবে। (বুখারী, মুসলিম হা: ১৭৩৯)

কুরআন বুঝে পড়ার গুরুত্ব: বর্তমান মুসলিম সমাজে মারাত্বক এক সমস্যা বিরাজ করছে তা হচ্ছে মুসলিমরা কুরাআন তিলাওয়াত করেন কিন্তু তরজমা বুঝেন না বা বুঝে পাঠ করার প্রয়োজন অনুভব করেন না।

অথচ আল্লাহ রব্বুল ‘আলামিন বলেন-“আমি তো তোমাদের জন্য অবতির্ন করেছি কিতাব, যাতে আছে তোমাদের জন্য উপদেশ। তোমরা কি তা বুঝবে না?” (সূরাহ আম্বিয়া, ১০)

‘তোমরা কি তা বুঝবে না’ প্রশ্নের মাধ্যমে আল্লা-হ তা‘আলা কুরআন বুঝার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্ল-হ রব্বুল ‘আলামীন আরো বলেন : “এ হল এক কল্যাণময় কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ গ্রহণ করে উপদেশ।” (সূরাহ সাদ, ২৯)

এখানে আল্ল-হ তা’আলা কুরআন অনুধাবন ও উপদেশ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এ দু‘টোর কোনটাই অর্থ বুঝা ব্যতীত শুধু তিলাওয়াত দ্বারা সম্ভব নয়। এ ধরনের আরো বহু আয়াত রয়েছে, যাতে আল্ল-হ তা‘আলা কুরআন অর্থ বুঝে তিলাওয়াত করা ও গভীরভাবে অনুধাবন করার জন্য বলেছেন। শুধু এতটুকুই নয় বরং যারা আল-কুরআন তিলাওয়াত করে অথচ অর্থ বুঝে না, আল্ল-হ তাদের সমালোচনা করেছেন।

যেমন আল্ল-হ রব্বুল ‘আলামীন বলেন : “আর তাদের মাঝে এমন কতক নিরক্ষর লোক আছে যাদের মিথ্যা আশা (আমানিয়্যা) ব্যতিত কিতাব সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই, তারা শুধু অমুলক ধারনা পোষন করে।’ (সূরাহ বাক্বারাহ, ৭৮) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা শাওকানী (রহ,) বলেন ঃ ‘আমানীয়্যার অর্থ হল তরজমা অনুধাবন ব্যাতিত শুধু তিলাওয়াত করা অর্থাৎ তিলাওয়াত করা ছাড়া তাদের কিতাব সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। অর্থ বুঝে না, গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করে না।’ (তাফসীর ফাতহুল কাবীর)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ,) বলেন ঃ  ‘আল্লা-হ রব্বুল ‘আলামীন এ আয়াত ও পূর্ববর্তী আয়াতে দু’ ধরনের লোকদের তিরষ্কার করেছেন। প্রথমতঃ যারা আল্ল-হর কিতাবকে বিকৃত করেছে, দ্বিতীয়তঃ যারা তিলাওয়াত ছাড়া আল্ল-হর কিতাবের আর কোন খবর রাখে না। অর্থ অনুধাবন ব্যতীত তিলাওয়াতকেই বলে আমানীয়্যা।’ (বাদায়ে আত-তাফসীর)

হাসান বাসরী (রহ,) বলেছেনঃ আল-কুরআন নাযিল হয়েছে এজন্য যে, তা মানুষ বুঝবে ও ‘আমাল করবে। কিন্ত আফসোস! মানুষ আজ শুধু তার তিলাওয়াতকেই ‘আমাল হিসেবেই গ্রহণ করে নিয়েছে। (সিয়ারু আ‘লাম আন-নুবালা)

বিখ্যাত সাহাবী ইবনু মাস‘উদ রাযি, বলেনঃ আমাদের যুগে কুরআন হিফ্য করা কঠিন ছিল আর তা ‘আমাল করা সহজ ছিল। আমাদের পর এমন যুগ আসবে যখন কুরআন হিফ্য করা সহজ হবে কিন্ত তার উপর ‘আমাল করা কঠিন হবে। (আল-জামে লি আহকামিল কুরআন)

কুরআন না বুঝে পড়ার পরিনাম ঃ আল্ল-হ রব্বুল ‘আলামীন আল-কুরআনে ইরশাদ করেন ঃ “রসূল স: বলবেন: হে আমার প্রতিপালক, আমার সম্প্রদায় তো এ কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে।” (সূরাহ আল-ফূরক্বন, ৩০)

রসুল স: বলেছেন: তারা কুরআন পাঠ করবে কিন্ত তা তাদের কন্ঠ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে, কন্ঠ অতিক্রম করে অন্তর পর্যন্ত পৌছাবে না। বুখারী হা: ৪৬৭০

আল্ল-হর রসুল (স:) হাশরের ময়দানে যে সকল উম্মাত কুরআন ত্যাগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করবেন। আল্লামা ইবনু কাসীর রহ. বলেনঃ যারা কুরআন তিলাওয়াত অগ্রাহ্য করল, তারা কুরআন ত্যাগের অভিযোগে অভিযুক্ত। যারা কুরআনের অর্থ অনুধাবন ও তা গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করল না, তারাও কুরআন ত্যাগের অভিযোগে অভিযুক্ত হবে। যারা কুরআনের বিধি-বিধান মানল না, তারাও কুরআন ত্যাগকারী বলে অভিযুক্ত হবে। (তাফসীর ইবনু কাসীর)

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ, বলেনঃ আল-কুরআন ত্যাগের বিভিন্ন প্রকার আছে তার মাঝে একটি হল কুরআনের তরজমা অনুধাবন পরিহার করা। (বাদায়ে আত-তাফসীর)

সাহাবাদের কুরআন পড়ার নমুনা ঃ রসুলুল্ল-হ (স:) বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় কুরআন যেভাবে নাযিল হয়েছেসেভাবেই পাঠ করবে, সে যেন ইবনু উম্মু (‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ) - এর মত পাঠ করে। (মুসনাদে আহমাদ, হা: ৩৫)

কী তার পদ্ধতি? তিনি বলেছেন : আমাদের মধ্যে যখন কোন ব্যক্তি দশটি আয়াতের তিলাওয়াত শিখত তখন সামনে আর অগ্রসর হত না, যতক্ষণ না সে দশটি আয়াতের অর্থ অনুধাবন করত ও সে মোতাবেক ‘আমাল করত। (তাফসীরে তাবারী, ৪০ পৃষ্ঠা)

অর্থাৎ দশটি আয়াত প্রথম তিলাওয়াত, তারপর অর্থ-তরজমা অনুধাবন, অত:পর হিসাব নেয়া যে, এর বাস্তবায়ন আমার জীবনে কতটুকু। এ রকমই ছিল সহাবায়ী কিরামের কুরআন তিলাওয়াত পদ্ধতি।

আহবানঃ আমরা বছরে কয়েকবার এমনকি শুধু রমাযান মাসে কয়েকবার কুরআন পাঠ করে ‘খতম’ করি, অথচ একটি বারও তার অর্থ অনুধাবন ‘শুরু’ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি না। তাই সকলকে আহবান জানাই শুধু বেশি বেশি কুরআন ‘খতম’ করা নয়, বরং অর্থ জানা ও বুঝার চেষ্টা ‘আরম্ভ’ করি। উল্লেখ্য রমাযান হচ্ছে কুরআন নাযিলের মাস আর কুরআন হচ্ছে সুন্দর জীবন গঠনে আল্ল-হর মনোনীত একমাত্র নির্ভুল গ্রন্থ তাই

আমরা কি পারি না, প্রত্যেকে এ সিদ্ধান্ত নিতে জীবনে একবার হলেও কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থ বুঝে বুঝে তিলাওয়াত করব। শুরু করেই দেখুন না! আপনি অভিভূত হয়ে যাবেন। মনে হবে আপনি সত্যিই মহান আল্লা-হর সাথে সরাসরি কথা বলছেন আর আল্ল-হ আপনার সামনে উপস্থিত। আপনি যেন তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন। মনে হবে তাঁকে প্রশ্ন করছেন, তিনি উত্তর দিচ্ছেন। মনে হবে, আপনি নতুন করে ঈমান গ্রহন করলেন। আপনার বিশ্বাস হতে চাইবে না যে, এ কুরআন চৌদ্দশত বছর আগে অবতীর্ন হয়েছে। মনে হবে মাত্র কিছুক্ষণ আগে নাযিল হয়েছে। আল্ল-হ আমাদের কুরআন বুঝার ও সে অনুসারে চলার তাওফীক দিন। আমীন!

(সূত্রঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ওয়াল ঈমান)

বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১২

আল্ট্র‌া মডার্ণ


আমরা আল্লাহকে ছাড়াও অন্যকে সেজদা দিতে ভালবাসি
আমরা রসুল (সঃ)কে ছাড়াও অন্যকে অনুসরণ করি
আমরা অ-ইসলামী কালচার গ্রহণ করেছি
আমরা আল্ট্র‌া মডার্ণ হয়েছি।

আমরা বর্তমানে সালাম দেওয়া ভুলে গেছি
আমরা মুসলিম, এই কালচার মডার্ণ
আমরা সর্ব প্রথম সালাম দেওয়া বাদ দিয়েছি
আমরা আল্ট্র‌া মডার্ণ হয়েছি।


আমরা হাই, হ্যালো ছাড়া কথা বলিনা
আমরা পর্দা করা ছেড়ে দিয়েছি  
আমরা ছোট্ট থেকে শিক্ষা পেয়েছি
আমরা আল্ট্র‌া মডার্ণ হয়েছি।

আমরা ভুলে গেছি অহংকার করা যায় না
আমরা ভুলে গেছি মানবতা আমাদের ধর্ম
আমরা শঠতার জাল বুনছি
আমরা আল্ট্র‌া মডার্ণ হয়েছি।

আমরা অসহায়ের পাশে দাড়াই না
আমরা মিথ্যা বদনাম করতে ছাড়িনা
আমরা কবর আযাবের ভয় কাটাতে পেরেছি
আমরা আল্ট্র‌া মডার্ণ হয়েছি।

বুধবার, ১৩ জুন, ২০১২

ওযু ও তায়াম্মুম-এর পদ্ধতি

সলাতের জন্য ওযু ফারয।

                                                             (তিরমিযী হাঃ ৭৫)
পানি না পেলে বা পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে তায়াম্মুম করতে হবে। ওযু ও তায়াম্মুম আরম্ভ করার সময় বিসমিল্লাহ্ বলতে হবে।


ওযু করার নিয়ম ও দু'আ

প্রথমে বিসমিল্লাহ্ বলতে হবে। (তিরমিযী হাঃ ২৫)
তারপর তিনবার উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত উত্তমরূপে ধুতে হবে। তিনবার কুলি করতে হবে। তিনবার নাকে পানি দিয়ে (বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়তে হবে) অথবা কুলি করার জন্য নেয়া পানি থেকে অর্ধেক দিয়ে কুলি করে বাকী অর্ধেক নাকে দিলেও চলবে। তারপর তিনবার মুখমণ্ডল (তথা চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নীচ ও উভয় কানের এবং চোখের কোণ পর্যন্ত) ধুতে হবে। দাড়ি থাকলে খিলাল করতে হবে। তারপর প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। তারপর মাথা এমনভাবে মাসাহ করতে হবে যে, হাতে নতুন পানি নিয়ে তা ঝেড়ে ফেলার পর উভয় হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগ একত্রে মিলিয়ে তা কপালের গোড়া থেকে সম্পূর্ণ মাথা হাতের তালু দিয়ে মোছার উদ্দেশ্যে হাতের তালু (মাথার শেষ থেকে) কপাল পর্যন্ত সমস্ত মাথা মাসাহ করতে হবে। এবপর শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা কান এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা কানের পিঠ মাসাহ করে সব শেষে প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত তিনবার (বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা খিলাল করে পায়ের আঙ্গুলগুলো) উত্তমরূপে ধুয়ে ফেলতে হবে। যাতে ওযুর কোন অঙ্গ শুকনা না থাকে।
এভাবে ওযু সম্পন্ন করতে হবে। (মিশকাত হাঃ ৩৬২, ৩৭২-৩৭৪, ৩৭৯, ৩৮২)

উল্লেখ্য ওযুর অঙ্গসমূহ দু'বার ও একবার করে ধোয়ার কথাও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (বুখারী হাঃ ১৫৪-১৫৫)


ওযু শেষে দু'আ


উচ্চারনঃ  আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাছুলুহু ।

অনুবাদঃ আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে , অল্লাহ ভিন্ন আর কেহই ইবাদতের উপযুক্ত নাই তিনি এক তাঁহার কোন অংশীদার নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দা এবং তাঁহার প্রেরিত নবী।

উচ্চারনঃ আল্ল-হুম্মাজ 'আলনী মিনাততাওওয়া-বীনা ওয়াজ'আলনী মিনাল মুতাত্বহহিরীর।

অনুবাদঃ হে আল্লহ! আমাকে তাওবাহকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর। (সহীহ তিরমিযী, মিশকাত হাঃ ২৮৯. ইরওয়া হাঃ ৯৬-এর আলোচনা দ্রঃ সনদ সহীহ, বুলূগুল মারাম হাঃ ৫৪)


ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ

১। প্রস্রাব ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে

২। যে সকল কারণে গোসল ফারয হয় তা ঘটলে

৩। বমি হলে

৪। ঘুমিয়ে পড়লে

৫। উটের গোশত খেলে

৬। আবরণ ছাড়া যৌনাঙ্গে হাত স্পর্শ হলে

৭। সঙ্গাহীন হয়ে পড়লে

৮। মাইয়েতের গোসল দিলে

৯। মযী (পাতলা বীর্য) বের হলে ওযু নষ্ট হয়ে যায়।
(বুখারী হাঃ ১৭৭, মুসলিম হাঃ ৭৬, ৮০, ৮১, বুলূগুল মারাম হাঃ ৭০/১১, তিরমিযী হাঃ ৮১, ৮৪)

উল্লেখ্য, সলাত অবস্থায় নাক দিয়ে রক্ত বের হলে (বুখারী হাঃ ১৩৪) এবং বিনা হেলানে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে (তিরমিযী হাঃ ৭৭) বাতকর্মের গন্ধ বা শব্দ না হলে, সলাতবস্থায় নাপাকী লাগলে ওযু নষ্ট হয় না। (বুখারী হাঃ ১৭২)


তায়াম্মুমের নিয়ম

‌'বিসমিল্লাহ' বলে পাক-পবিত্র ধূলা-মাটিতে উভয় হাত একবার মেরে দু'হাতে ফুঁ দিতে হবে। তারপর প্রথমে মুখমণ্ডল ও পরে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মুছতে হবে। এটাই তায়াম্মুম (বুখারী হাঃ ৩২৬, ৩২৭)

উল্লেখ্য ওযু ও তায়াম্মুম শেষে ওযুর দু'আ পড়তে হবে। ওযুর অংশ বিশেষ তিনবারের বেশি ধোয়া ঠিক নয়।

যদি কোন জুনুবী (নাপাক লোক যার উপর গোসল ফারয) অসুখের ভয় করে, কিংবা মরণের আশঙ্কা করে অথবা পিপাসার পানি ফুরিয়ে যাবার ভয় করে তাহলে সে তায়াম্মুম করতে পারে। (বুখারী হাঃ ৪৬৪)

যদি কেউ পানি না পায় এবং সলাত ছুটে যাবার ভয় থাকে তাহলে সে তায়াম্মুম করতে পারে। আল্লহ আমাদের সর্বাবস্থায় পবিত্রতা অবলম্বনের তাওফীক দান করুন। আমীন

সোমবার, ১১ জুন, ২০১২

পবিত্রতা সম্পর্কিত কতকগুলো জরুরী বিষয়

১। দুধ পানকারী ছেলে শিশু যদি শরীর কিংবা কাপড়ে প্রস্রাব করে ফেলে তবে তা ধোয়া আবশ‌্যক নয়। সে ক্ষেত্রে শুধু পানি ছিটিয়ে দিলেই পবিত্র হয়ে যায়। কিন্তু মেয়ে শিশু প্রস্রাব করলে ধোয়া ব্যতীত পবিত্র হয় না।
(তিরমিযী হাঃ ৫৭০)

২। বীর্য যুক্ত কাপড় ধোয়ার পরও যদি দাগ পড়ে থাকে তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই।
(বুখারী হাঃ ২২৬)

৩। জুতায় নাপাকী লাগলে মাটিতে উত্তমরূপে ঘষলেই তা পবিত্র হয়ে যায়, অনুরূপ নাপাক জায়গা দিয়ে চলার কারণে যদি কোন মহিলার কাপড়ে নাপাকী লাগে সেক্ষেত্রে পবিত্র মাটির উপর দিয়ে চলার সময় কাপড়ের আঁচল মাটি স্পর্শ করলেই তা পবিত্র হয়ে যায়।
(মিশকাত হাঃ ৪৬৯)

৪। কোন জিনিসে নাপাকী লাগলে সে নাপাকী যুক্ত অংশটুকু উত্তমরূপে ধুয়ে দেয়াই যথেষ্ট। সম্পূর্ণ অংশ ধোয়া জরুরী নয়।
(তিরমিযী হাঃ ১১০)

৫। ঘুম থেকে জেগে উঠা ব্যক্তি ওযু করার পূর্বে প্রথমে তিনবার হাত ধুয়ে নিয়ে ওযুর পাত্রে হাত ঢুকাবে।
(মুসলিম হাঃ ৫৫৩, তিরমিযী হাঃ ১০৬)

৬। কোন পাত্রে কুকুর মুখ দিলে সে পাত্রটি সাতবার ধুতে হবে প্রথমে বা শেষে উত্তমরূপে মাটি দিয়ে ঘষে মেজে পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে।
(তিরমিযী হাঃ ৮৮)

৭। বিড়ালের উচ্ছিষ্ঠ প্রবিত্র। সেহেতু বিড়ালের ব্যবহৃত পানি দিয়ে ওযু ও গোসল করা জায়িয।
(তিরমিযী হাঃ ৮৯)

৮। জুনুবী নাপাকী অবস্থায় কোন খাবার খেতে চাইলে ওযু করে নিতে হবে।
(তিরমিযী হাঃ ৫৭১)

৯। যে ঘরে কোন প্রাণীর ছবি ও কুকুর থাকে, সে ঘরে আল্লাহর রহমাতের মালাইকা (ফেরেশতা) প্রবেশ করে না।
(তিরমিযী হাঃ ২৭৪১)

১০। স্বামী-স্ত্রী একাধিকবার মিলনের ইচ্ছা করলে মধ্যবর্তী সময়ে লজ্জাস্থান ধৌত করে শুধু ওযু করলে চলবে।
(তিরমিযী হাঃ ১৩৬)

১১। প্রস্রাবের অসতর্কতার জন্যই ক্ববরে ভীষণ 'আযাব হয়। কাজেই প্রস্রাবজনিত নাপাকী থেকে সাবধান।
(বুখারী হাঃ ২১০)

১২। যে সকল জানোয়ারের গোশত খাওয়া হালাল, সে সমস্ত জানোয়ােরর প্রস্রাব-পায়খানা কাপড় বা শরীরে কিঞ্চিত লাগলে তাতে দোষ নেই। ধুয়ে নিলেই চলবে।
(তিরমিযী হাঃ ৪৮১)

শুক্রবার, ৮ জুন, ২০১২

প্রাপ্তবয়স্কা মহিলাদের জন্য জানা একান্ত জরুরী

প্রাপ্তবয়স্কা নারীদের প্রত্যেক মাসেই কয়েক দিন করে স্বাভাবিকভাবে যে রক্তস্রাব হয় তাকে মাসিক বা হায়িয বলে। কত বছর বয়সে এই রক্তস্রাব আরম্ভ হবে হাদীসে তার কোন বিবরণ নেই। মেয়েদের যৌবনের সর্বপ্রথম যে কয় দিন রক্তস্রাব হয় সেই কয় দিনকেই হায়িযের সময়সীমা ধরে নিতে হবে।

আর যদি তার প্রথম যৌবনে যে কয়দিন হায়িয হয়েছিল পরের সময়গুলিতে তার পূর্ব দিনগুলো ছাড়িয়ে যায় তবে পূর্বের হিসাবের দিন বাদ দিয়ে অতিরিক্ত দিনগুলোতে গোসল করে সলাত আদায় করতে হবে। (তিরমিযী হাঃ ১২৩)

মেয়েদের প্রথম যৌবনে কতদিন স্রাব হয়েছিল তা যদি মনে না থাকে তবে তারা ৬ অথবা ৭ দিন হায়িয ধরে নিয়ে অবশিষ্ট দিনগুলিতে গোসল করে সলাত আদায় করবে। (মিশকাত হাঃ ৫১৬)

যে কয়দিন হায়িয থাকবে সে দিনগুলোর সলাত মাফ, কিন্তু হায়িয অবস্থায় রমাযানের সিয়াম (রোযা) না রেখে অন্য মাসে তা আদায় করতে হবে। (মুসলিম হাঃ ৬৬৯)

হায়িয (মাসিক) অবস্থায় যে সকল কাজ নিষিদ্ধঃ
১। কুরআন মাজীদ স্পর্শ ও তিলাওয়াত করা,
২। বিনা গিলাফে কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা
৩। সলাত আদায় করা
৪। সিয়াম (রোযা) পালন করা
৫। সাজদায়ে শুকর করা
৬। সাজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করা
৭। সহবাস করা

××× তবে দু'আ পাঠ করা জায়িয

                                          (সিহাহ সিত্তাহ)

আল্লাহতা'আলা বলেন ঃ সুতরাং তোমরা রক্তস্রাবকালে স্ত্রী-সঙ্গম বর্জন করবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী সঙ্গম করবে না; সুরা বাক্কারাহ-২২২

হায়িয অবস্থায় হালাল জেনে সহবাস করা কুফরী কাজ। (মিশকাত হাঃ ৫০৬)

হায়িযের প্রথম অবস্থায় (যখন লাল রক্ত দেখা যায়) সহবাস করলে সাড়ে চার আনা ও শেষ অবস্থায় (যখন হলদে রক্ত দেখা যায়) সহবাস করলে সোয়া দুই আনা পরিমাণ স্বর্ণ অথবা ঐ পরিমাণ স্বর্ণের দাম কাফ্ফারা দিতে হবে। (তিরমিযী হাঃ ১৩২)

নিফাস
স্ত্রীলোকের সন্তান প্রসবের পর যে রক্তস্রাব হয় তাকে নিফাস বলে। নিফাসের সর্বোচ্চ সময়সীমা ৪০ (চল্লিশ) দিন আর কমের কোন সীমা নেই।

যখনই রক্তস্রাব বন্ধ হবে গোসল করে সলাত আদায় এবং সিয়াম পালন করতে হবে। নিফাস বন্ধ হবার পরও ৪০ দিন পুরো করার উদ্দেশ্যে সলাত ও সিয়াম বাদ দিলে শক্ত গুনাহগার হতে হবে। (আইনী তুহফা সলাতে মুস্তফা ১ম খন্ড ৬০ পৃষ্ঠা)

হায়িযের অবস্থায় যা নিষিদ্ধ নিফাসের অবস্থাতেও সে সব নিষিদ্ধ।

ইসতিহাযা (প্রদর)
হায়িয ও নিফাসের সময় অতিক্রান্ত হবার পরও যে রক্তস্রাব হতে থাকে তাকেই আরাবী ভাষায় ইসতিহাযা বলে। বাংলা ভাষায় তাকে প্রদর রোগ বলা হয়।

মুস্তাহাযা (যার ইসতিহাযা "প্রদর" বা "দৃষ্টি রোগ" হয়েছে) স্ত্রীলোক পবিত্র স্ত্রীলোকের মত।

হায়িযের ক্ষেত্রে যৌবনের প্রথম হায়িযকাল, কিংবা তা মনে না থাকলে ৬/৭ দিন এবং নিফাসের ক্ষেত্রে চল্লিশ দিনের পর শরীরের অঙ্গ বিশেষ হতে রক্ত ধুয়ে ফেলে গোসল করে সলাত ইত্যাদি সমাধা করবে। (তিরমিযী হাঃ ১২৩)

যার ইসতিহাযা হয়েছে সে এক গোসলে যুহর ও আসর একত্রে, মাগরিব ও ইশা একত্রে আর এক গোসলে ফাজরের সলাত আদায় করবে এবং সে অবস্থায় সিয়ামও (রোযা) রাখতে পারবে। (মিশকাত হাঃ ৫১৬)

প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের যা জানা জরুরী

প্রসাবের রাস্তা দিয়ে প্রস্রাব ছাড়াও আরো তিন রকম তরল পদার্থ বের হয়- যাকে আরবীতে মনী, মযী ও অদী বলে। এই তিনটির মধ্যে মযী ও অদী বের হলে গোসল ফারয হয় না। বরং প্রস্রাবের রাস্তা এবং শরীরের কোন জায়গায় বা কাপড়ে ঐ পদার্থ লাগলে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। ওযু অবস্থায় হলে ওযু নষ্ট হয়ে যাবে।

১। মযী ঃ যৌন উত্তেজনার সময় বিনা বেগে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে সাদা আঠা যুক্ত যে পানি বের হয় তাকেই মযী বলে। কখনো বিনা অনুভুতিতেও এই পানি বের হয়। সাধারণতঃ যুবক ও শক্তিশালী লোকদের যৌন উত্তেজনার সময় এটা বের হয়। এই মযী সম্বন্ধে রসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ঃ এর জন্য ওযু যথেষ্ট-(মুসলিম হাঃ ৬০৩) আর কাপড়ে লাগলে যেখানে লাগবে সেখানে এক আঁজলা (দুই হাতের তালু) পানি দিয়ে ধুয়ে দাও-(তিরমিযী হাঃ ১১০) এবং লিঙ্গটাও ধুয়ে ফেল-(মুসলিম হাঃ ৬০২)

২। অদী ঃ প্রস্রাবের পূর্বে কিংবা পরে যে গাঢ় সাদা পানি বের হয় তাকে অদী বলে। অদী সম্পর্কে "আয়িশাহ্ (রাযি.) বলেনঃ প্রসাবের পর অদী বের হলে লিঙ্গ ও অন্ডকোষ দু'টি ধুতে হবে এবং ওযু করতে হবে। গোসল করতে হবে না। ইবনু 'আব্বাসও তাই বলেন। (বাইহাকী ১ম খন্ড ১১৫ পৃষ্ঠা ও ইবনুল মুনযির, ফিকহুস সুন্নাহ ১ম খন্ড ২৬ পৃষ্ঠা বরাতে আইনী তুহফা সলাতে মুস্তফা ১ম খন্ড ২০-২১ পৃষ্ঠা)

৩। মনী ঃ উত্তেজনার চূড়ান্ত পর্যায়ে লম্ফ দিয়ে যে তরল পদার্থ পেশাবের রাস্তা দিয়ে বের হয় তাকে মনী বা বীর্য বলে। বীর্য যদি কোনরূপ বৈধ বা অবৈধ উপায়েও 'সবেগে' বের হয় তাহলে গোসল ফারয হয়। (তিরমিযী হাঃ ১০৯)

বৃহস্পতিবার, ৭ জুন, ২০১২

নাপাকী থেকে পবিত্র হওয়ার সঠিক নিয়ম জানুন এবং ক্ববর আযাব থেকে বাঁচুন

পবিত্রতার নির্দেশ

সলাতের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা ফা্রয; সুরা আন-নিসা ৪৩
অপবিত্র শরীরে, কাপড়ে ও বিছানা পত্রে সলাত হয় না; মিশকাত হাঃ ২৬২

যেসব কারণে শরীর নাপাক হয় এবং গোসল ফারয হয়

১। সহবাস করলে
২। স্বপ্নদোষ হলে
৩। স্বপ্নের কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক শরীরে, কাপড়ে বা বিছানায় বীর্যের চিহ্ন দেখতে পেলে
৪। স্বামী-স্ত্রীর মিলন হলে বীর্যপাত হোক বা না হোক
৫। এছাড়া মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব (হায়িয) বন্ধ হলে
৬। নিফাস (সন্তান প্রসবের পার যে রক্তস্রাব হয়) বন্ধ হলে
৭। স্ত্রী-পুরুষ কারও উত্তেজনার সাথে বীর্য বের হলে ফারয গোসল ছাড়া সলাত হবে না।

উল্লেখ্য, কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে, মুর্দাকে গোসল দিলে এবং জুমু'আর সলাতের জন্য গোসল করা সুন্নাত। (মিশকাত হাঃ ৪১৫, ৪১৯, ৪২১)

শনিবার, ১৯ মে, ২০১২

আল্লাহর প্রতি ইমানের প্রশ্ন

***একটু লক্ষ করুন***


কারো মনে আঘাত করার জন্য এই পোষ্টটি করা হয় নাই
আমাদের প্রত্যেকের মনে জানতে ইচ্ছা করে আল্লাহ কে, কোথায় আছেন, কি করেন।

কবরে একটি প্রশ্ন করবে ফেরেশতারা ঃ "কে তোর রব" উত্তরটা এই পৃথিবী থেকে ঠিক করে নিতে হবে।

আমরা অনেকেই জানিনা কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক না...
(কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে জেনে নেওয়ার জন্য)


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম




(এই)  সেই (মহা) গ্রন্থ (আল কোরআন) তাতে (কোনো) সন্দেহ নেই, যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করে (এই কিতাব কেবল) তাদের জন্যই পথপ্রদর্শক; সুরা বাক্কারা, আয়াত-

যে ঘোষণা আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয, যে ব্যক্তি আল্লাহ-কে অবিশ্বাস করে সে কাফের, কোরআন-কে যে অবিশ্বাস করে সে কাফের, কোরআনের একটি আয়াতকে যে অবিশ্বাস করে সে কাফের আবার সহীহ হাদীস যে ব্যক্তি অবিশ্বাস করে সেও কাফের

মুমিন যারা তারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে তাদের জন্য কোরআন পথপ্রদর্শক এই পথপ্রদর্শক (কোরআনের) ভিতরে আল্লাহ তায়ালা সম্বন্ধে বহু আয়াত আছে এই আয়াত গুলো যে ভাবে আছে ঠিক সেই ভাবে মুসলিমদেরকে বিশ্বাস করতে হবে, সহীহ হাদীসে যেভাবে আছে সেভাবে বিশ্বাস করতে হবে এর বাইরে কেউ অন্য কিছু বিশ্বাস করলে তা কবুল হবে না এবং তা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য যায়েজওনা

ঈমান- মুজমাল
উচ্চারণঃ -মানতু বিল্লা-হি কামা-হুয়া বিআসমা-ইহী ওয়া সিফা-তিহী ওয়া ক্বাবিলতু জামী- আহকা-মিহী ওয়া আরকা-নিহী
অর্থঃ আমি আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান আনলাম তিনি যেমন, তার নামসমূহ তাঁর গুণাবলী সহকারে এবং আমি গ্রহণ করেছি তার সমস্ত বিধান আরকানকে

মানুষের আমল বিশুদ্ধ হবার পূর্বশর্ত হল বিশুদ্ধ ঈমান সুরা নাহাল ৯৭, বানি ইসরাইল ১৯

ঈমান বিশুদ্ধ না হলে আমল যতই বিশুদ্ধ হোক তা কবুল হবে না যেমন ছলাত (নামায) বিশুদ্ধ হওয়ার পূর্বশর্ত উযু উযু যদি বিশুদ্ধ না হয় আর ছলাত (নামায) যদি বিশুদ্ধ হয় তাহলে ছলাত (নামায) হয় না ঈমানের মধ্যে সর্ব প্রথম হল আল্লাহর উপর ঈমান সেই আল্লাহর উপর ঈমান যদি বিশুদ্ধ না হয় তাহলে অন্যান্য আমল যতই বিশুদ্ধ হোক, যেমন সলাত (নামায), ছিয়াম (রোযা), হজ্ব, যাকাত কোনটাই কবুল হবেনা

ঈমান এবং চিন্তা-ভাবনা, দুটি বিষয় বুঝে নিতে হবে ঈমান হল অন্তরের বিশ্বাস
 বিশ্বাস করার জন্য চাই জ্ঞান এই জ্ঞানকে বলা হয় ইলম যার উপর বিশ্বাস করব সে সম্পর্কে জ্ঞান (ইলম) না থাকলে বিশ্বাস করব কিসের ভিত্তিতে?

ফেরেশতা আমরা চোখে দেখিনি তাই ঈমান আনতে হলে ফেরেশতা সম্পর্কে জানতে হবে জানতে হলেই কুরআন সহীহ হাদীস দ্বারা তাদের পরিচয় অবগত হতে হবে ফেরেশতাদের সম্পর্কে অবগত না হয়ে ঈমান আনা সম্ভব নয়

ইমাম বোখারী (রহঃ) তাঁর সহীহ বোখারীর ১ম খন্ডে কিতাবুল ইলমে বলেন- কোন কথা বলার কোন কাজ করার পূর্বে সে বিষয়ে ইলম হাসিল করতে হবে সহীহ আল-বোখারী ১ম খন্ড পৃঃ ৭১ আধুনিক প্রকাশনী বোখারী শরিফ ইসলামী উন্ডেশন, ১ম খন্ড ৮১ পৃঃ ইমাম বোখারী দলিল দেনঃ- জানো সেই আল্লাহ্ কে যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই; সুরা মুহাম্মাদ ১৯ এই আয়াতে আল্লাহ্ মানুষকে প্রথমে জানবার হুকুম করেছেন
আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ বুঝিয়ে দিলেন যে, আল্লাহ্-কে মান্য করার পূর্বে আল্লাহ্-কে জানতে হবে ব্যাপারে আল্লাহ্ তাঁর কুরআন হাদীসের মধ্যে নিজের পরিচয় সম্পর্কে যা বলেছেন তা জেনে নিতে হবে

আল্লাহ্ তাঁর অবতীর্ণ আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ প্রদান করেছেনযেমন- সুরা নাহাল-৬৯, সুরা রুম-২১, সুরা যুমার-৪২, জাসিয়া-১৩, হাসর-২১, ছাড়াও বহু আয়াতে চিন্তা ভাবনার কথা বলেছেন জানবার কথা বলেছেন, যেমন-সুরা বাক্কারা-১১৮, সুরা ইউনুস-, আন-নামাল-৫২, আরও অনেক আয়াতে আল্লাহ্ তাঁর আয়াত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের হুকুম করেছেন

আল্লাহ্ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের হুকুমঃ
আল্লাহ্ যে সকল আয়াতে এবং রাসুলুল্লাহ (সঃ) যে সকল হাদীসে আল্লাহ্- বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন সে সম্পর্কে জ্ঞাত হতে হবে আর তার শিক্ষা গ্রহন করতে হবে কারণ জ্ঞান না হলে ঈমান আনা সম্ভব নয় আল্লাহ্- অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে উল্লেখিত আয়াত হাদীসের চর্চা করা ফরয কারন তার চর্চা না হলে ইলম হাসিল হবেনা আর ইলম (জ্ঞান) হাসিল না হলে আল্লাহ্- উপর ঈমান আনা হবে না

আল্লাহ্ নিজেই হুকুম করেছেন যে, তাঁর (আল্লাহ্) সম্পর্কে যিনি জানেন তাকে জিজ্ঞাসা করে দেখ; সুরা ফুরক্কান-৫৯

জানো সেই আল্লাহ্-কে যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই; সুরা মুহাম্মদ-১৯

তিনি আকাশ মন্ডলী পৃথিবী উহাদিগের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিবসে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাশীন হন তিনিই রাহমান, তাহার সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া দেখ; সুরা ফুরকান-৫৯

মূর্থদের ঘৃণা করেন আল্লাহ্
আল্লাহ্- নিকট নিকৃষ্টতম জীব সেই বধির মূক যাহারা কিছুই বোঝে না; সুরা আনফাল-৫২ তাহাদিগের চক্ষু আছে তদ্দারা দেখে না এবং তাহাদিগের কর্ণ আছে তাহারা তদ্দারা শ্রবন করে না, ইহারা পশুর ন্যায় বরং উহা অপেক্ষাও অধিক বিভ্রান্ত; সুরা 'রাফ-১৭৯

যাদের অন্তরে দ্বীনি (আল্লাহ্ রাসুল (সঃ)-এর) উপদেশ স্থান পায়না, তাদেরকে ইসলামী রীতি নীতির কথা বলা হলে তাদের অন্তরে সেই কথা বদ্ধমুল হয় না ববং একদিক দিয়ে ঢুকে অপর দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়, তাদের অন্তর যেন একটি নাফাক বা সুড়ঙ্গ পথ, এরা মুখে ইসলামের কথা বললেও অন্তরে কুফরীকে লালন করে

"মানুষের মাঝে এমন কিছু লোক আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ্ আখেরাতের প্রতি ঈমান এনেছি মূলতঃ তারা ঈমানদার নয়"; সুরা বাক্কারা-
"মানুষের মাঝে এমন কিছু লোক আছে, যাদের পার্থিব জীবনের কথা-বার্তা আপনাকে চমৎকৃত করবে, আর তার অন্তরের কথার ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাকে সাক্ষী করে, সে মূলত বড় ঝগড়াটে লোক"; সুরা বাক্কারা-২০৪