বুধবার, ১১ জুলাই, ২০১২

এই কবিতাটির নাম জানিনা, অনেক আগে এক বিজ্ঞ আলেমের কাছে থেকে শুনেছিলাম, আপনাদের কারো জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন...


-কবি কাজী নজরুল ইসলাম
তাওহীদের হায় চির সেবক
ভুলিয়া গিয়াছো সে তাকবীর
দূর্গা নামের কাছাকাছি প্রায়
দরগায় গিয়া লুটাও শীর

ওদের যেমন রাম নারায়ণ
মোদের তেমন মানিক পীর
ওদের চাউল কলার সাথে
মিশিয়া গিয়াছে মোদের ক্ষীর

ওদের শিব শিবানির সাথে
আলী ফাতেমার মিতালী বেশ
হাসানরে করিয়াছি কার্তীক আর
হোসেনরে করিয়াছি গজ গনেশ

বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে
মোরা আছি বসে
বিবি তালাকের ফতওয়া খুজেছি
কোরাণ হাদীছ চষে

হানাফী শাফেয়ী মালেকী হাম্বলী
মিটেনি তখনও গোল
এমনি সময় আজরাইল এসে
হাকিলো, তলপি তোল

বাহীরের দিকে যত মরিয়াছি
ভীতরের দিকে তত
গুনতিতে মোরা বাড়িয়া চলেছি
গরু ছাগলের মত;

শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১২

সিয়াম (রোযার) সম্পর্কে জরুরী কয়েকটি মাসআলাহঃ

১। নাপাক অবস্থায় সকাল হয়ে গেলে সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না। জাগ্রত হওয়ার পর গোসল করে সলাত আদায় করতে হবে। (মুসলিম হাঃ ১৮১০)

২। সিয়াম পালনকারী যদি ভূলক্রমে খায় বা পান করে তবে সে তার সওম (রোজা) পূর্ণ করবে। কেননা আল্ল-হ তা‘আলাই তাকে আহার করিয়েছেন ও পান করিয়েছেন। (বুখারী হাঃ ১৭৯৫)

৩। ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে সিয়াম ভেঙে যায়। (আবু দাউদ হা: ২৩৭২, মিশকাত হা: ১৯১০)

৪। ‘আয়িশাহ্ (রাযি,) হতে বণিত। রসূল (স:) বলেছেন: রমাযানের (রোজা) কাযা দায়িত্বে থাকা অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তার পক্ষ হতে তার অভিভাবকগণ সিয়াম পালন করবে। মুসলিম হা: ২৫৫৯, আবু দাউদ হা: ২৩৯২

৫। গর্ভবতী মেয়ে অথবা স্তন্য দায়িনী ‘মাতার’ যদি বেশী অসুবিধা হয় তবে সিয়াম ভঙ্গ করবে। অন্য সময় তা কাযা করে নিবে। অধিক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সিয়াম করতে না পারলে একটা লোককে তিন বেলা অর্থাৎ ইফতার, সন্ধ্যা রাতে ও সাহরী খাওয়াবে। অসুস্থ ব্যক্তির যদি আরোগ্য হওয়ার আশা না থাকে, তবে তার পক্ষ হতে ঐ নিয়মে খাওয়াবে। আর সাধারন অসুখ হলে রোগ মুক্তির পরই সে নিজেই তা কাযা করে নিবে- এটাই কুরআনের বিধান। (রোজা ও তারাবীহ- শাইখ আবু মোহাম্মদ আলীমুদ্দীন নদীয়াভী, ১১-১২ পৃষ্ঠা)

৬। সিয়াম অবস্থায় নাকে ঔষধ দেয়া কন্ঠনালীতে ঔষধের স্বাদ অনুভূত হলে চোখে বা কানে ঔষধের ফোঁটা দেয়া বা জখমে ঔষধ ব্যবহারে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। (সহীহুল বুখারী-তর্জামানুল বাব, ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড)

৭। সিয়াম অবস্থায় সুরমা, আতর, তৈল ব্যবহার করা যাবে।

৮। দাঁতের মাড়ির রক্ত থুথুর সাথে পেটে গেলেও অসুবিধা নেই।

৯। রোযাদার কুলি করে মুখের সব পানি ভাল করে ফেলে দেয়ার পর যদি থুথু এবং মুখের ভেতর যা ছিল তা গিলে নেয় তাতে কোন অসুবিধা নেই।

১০। শ্বাসকষ্টের কারনে ¯েপ্র (নেবুলাইজার) ব্যবহার করতে পারবে।

১১। সিয়াম পালনকারীর ওযুর প্রাক্কালে কুলি অথবা নাকে পানি দেয়ার সময় অসতর্কাবশত পানি পেটে প্রবেশ করলে তাতে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। কেননা তার এ পানি সেবন অনিচ্ছাকৃত হয়েছে।

১২। সিয়ামরত অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করাতে কোন দোষ নেই।

১৩। প্রয়োজনে রান্না করার সময় খাবার চাখলে বাচ্চাকে খাবার চিবিয়ে দিলে সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না।

১৪। সুরমা, টুথপেস্ট ও মাজন ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়।

১৫। রোযাদারের থুথু গিললে কোন আপত্তি নেই।

১৬। নাক, কান, দাঁত  অথবা শরীর কোন অংশ কেটে রক্ত বের হলেও সিয়াম নষ্ট হবে না।

(সূত্রঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ওয়াল ঈমান)

আল-কুরআন অর্থসহ পড়া কেন জরুরী?

বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম

কুরআন বুঝা সহজ : “আমি কুরআনকে বুঝার জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব কোন চিন্তাশীল আছে কি?” (সূরা কামার, ৩২)

কুরআন ধীরে ও সহীহ করে পড়তে হবে : “ ধীরে ধীরে সহীহ শুদ্ধ করে কুরআন তিলাওয়াত কর।” (সূরাহ মুয্যাম্মিল, ৪)

কুরআন তিলাওয়াতে ঈমান বৃদ্ধি পায়: “প্রকৃত ঈমানদার তো তারাই যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে কেঁপে উঠে। আর আল্লা-হর আয়াত যখন তাদের সামনে তিলাওয়াত করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়।” (সূরাহ আনফাল, ২)

কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শীর মর্যাদা ও কুরআন ঠেকে ঠেকে পড়ার সাওয়াব: আয়িশাহ্ (রাযি,) বলেছেন, কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী ব্যক্তি ঐ সব (মালায়িকাদের) ফেরেশতাদের শ্রেণীভূক্ত যারা মহাপূণ্যবান এবং লিখার কাজে লিপ্ত। আর যে ব্যক্তি অতি কষ্টে ঠেকে ঠেকে কুরআন পড়ে সে দ্বিগুণ সাওয়াব পাবে। (বুখারী, মুসলিম হা: ১৭৩৯)

কুরআন বুঝে পড়ার গুরুত্ব: বর্তমান মুসলিম সমাজে মারাত্বক এক সমস্যা বিরাজ করছে তা হচ্ছে মুসলিমরা কুরাআন তিলাওয়াত করেন কিন্তু তরজমা বুঝেন না বা বুঝে পাঠ করার প্রয়োজন অনুভব করেন না।

অথচ আল্লাহ রব্বুল ‘আলামিন বলেন-“আমি তো তোমাদের জন্য অবতির্ন করেছি কিতাব, যাতে আছে তোমাদের জন্য উপদেশ। তোমরা কি তা বুঝবে না?” (সূরাহ আম্বিয়া, ১০)

‘তোমরা কি তা বুঝবে না’ প্রশ্নের মাধ্যমে আল্লা-হ তা‘আলা কুরআন বুঝার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্ল-হ রব্বুল ‘আলামীন আরো বলেন : “এ হল এক কল্যাণময় কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ গ্রহণ করে উপদেশ।” (সূরাহ সাদ, ২৯)

এখানে আল্ল-হ তা’আলা কুরআন অনুধাবন ও উপদেশ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এ দু‘টোর কোনটাই অর্থ বুঝা ব্যতীত শুধু তিলাওয়াত দ্বারা সম্ভব নয়। এ ধরনের আরো বহু আয়াত রয়েছে, যাতে আল্ল-হ তা‘আলা কুরআন অর্থ বুঝে তিলাওয়াত করা ও গভীরভাবে অনুধাবন করার জন্য বলেছেন। শুধু এতটুকুই নয় বরং যারা আল-কুরআন তিলাওয়াত করে অথচ অর্থ বুঝে না, আল্ল-হ তাদের সমালোচনা করেছেন।

যেমন আল্ল-হ রব্বুল ‘আলামীন বলেন : “আর তাদের মাঝে এমন কতক নিরক্ষর লোক আছে যাদের মিথ্যা আশা (আমানিয়্যা) ব্যতিত কিতাব সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই, তারা শুধু অমুলক ধারনা পোষন করে।’ (সূরাহ বাক্বারাহ, ৭৮) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা শাওকানী (রহ,) বলেন ঃ ‘আমানীয়্যার অর্থ হল তরজমা অনুধাবন ব্যাতিত শুধু তিলাওয়াত করা অর্থাৎ তিলাওয়াত করা ছাড়া তাদের কিতাব সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। অর্থ বুঝে না, গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করে না।’ (তাফসীর ফাতহুল কাবীর)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ,) বলেন ঃ  ‘আল্লা-হ রব্বুল ‘আলামীন এ আয়াত ও পূর্ববর্তী আয়াতে দু’ ধরনের লোকদের তিরষ্কার করেছেন। প্রথমতঃ যারা আল্ল-হর কিতাবকে বিকৃত করেছে, দ্বিতীয়তঃ যারা তিলাওয়াত ছাড়া আল্ল-হর কিতাবের আর কোন খবর রাখে না। অর্থ অনুধাবন ব্যতীত তিলাওয়াতকেই বলে আমানীয়্যা।’ (বাদায়ে আত-তাফসীর)

হাসান বাসরী (রহ,) বলেছেনঃ আল-কুরআন নাযিল হয়েছে এজন্য যে, তা মানুষ বুঝবে ও ‘আমাল করবে। কিন্ত আফসোস! মানুষ আজ শুধু তার তিলাওয়াতকেই ‘আমাল হিসেবেই গ্রহণ করে নিয়েছে। (সিয়ারু আ‘লাম আন-নুবালা)

বিখ্যাত সাহাবী ইবনু মাস‘উদ রাযি, বলেনঃ আমাদের যুগে কুরআন হিফ্য করা কঠিন ছিল আর তা ‘আমাল করা সহজ ছিল। আমাদের পর এমন যুগ আসবে যখন কুরআন হিফ্য করা সহজ হবে কিন্ত তার উপর ‘আমাল করা কঠিন হবে। (আল-জামে লি আহকামিল কুরআন)

কুরআন না বুঝে পড়ার পরিনাম ঃ আল্ল-হ রব্বুল ‘আলামীন আল-কুরআনে ইরশাদ করেন ঃ “রসূল স: বলবেন: হে আমার প্রতিপালক, আমার সম্প্রদায় তো এ কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে।” (সূরাহ আল-ফূরক্বন, ৩০)

রসুল স: বলেছেন: তারা কুরআন পাঠ করবে কিন্ত তা তাদের কন্ঠ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে, কন্ঠ অতিক্রম করে অন্তর পর্যন্ত পৌছাবে না। বুখারী হা: ৪৬৭০

আল্ল-হর রসুল (স:) হাশরের ময়দানে যে সকল উম্মাত কুরআন ত্যাগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করবেন। আল্লামা ইবনু কাসীর রহ. বলেনঃ যারা কুরআন তিলাওয়াত অগ্রাহ্য করল, তারা কুরআন ত্যাগের অভিযোগে অভিযুক্ত। যারা কুরআনের অর্থ অনুধাবন ও তা গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করল না, তারাও কুরআন ত্যাগের অভিযোগে অভিযুক্ত হবে। যারা কুরআনের বিধি-বিধান মানল না, তারাও কুরআন ত্যাগকারী বলে অভিযুক্ত হবে। (তাফসীর ইবনু কাসীর)

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ, বলেনঃ আল-কুরআন ত্যাগের বিভিন্ন প্রকার আছে তার মাঝে একটি হল কুরআনের তরজমা অনুধাবন পরিহার করা। (বাদায়ে আত-তাফসীর)

সাহাবাদের কুরআন পড়ার নমুনা ঃ রসুলুল্ল-হ (স:) বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় কুরআন যেভাবে নাযিল হয়েছেসেভাবেই পাঠ করবে, সে যেন ইবনু উম্মু (‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ) - এর মত পাঠ করে। (মুসনাদে আহমাদ, হা: ৩৫)

কী তার পদ্ধতি? তিনি বলেছেন : আমাদের মধ্যে যখন কোন ব্যক্তি দশটি আয়াতের তিলাওয়াত শিখত তখন সামনে আর অগ্রসর হত না, যতক্ষণ না সে দশটি আয়াতের অর্থ অনুধাবন করত ও সে মোতাবেক ‘আমাল করত। (তাফসীরে তাবারী, ৪০ পৃষ্ঠা)

অর্থাৎ দশটি আয়াত প্রথম তিলাওয়াত, তারপর অর্থ-তরজমা অনুধাবন, অত:পর হিসাব নেয়া যে, এর বাস্তবায়ন আমার জীবনে কতটুকু। এ রকমই ছিল সহাবায়ী কিরামের কুরআন তিলাওয়াত পদ্ধতি।

আহবানঃ আমরা বছরে কয়েকবার এমনকি শুধু রমাযান মাসে কয়েকবার কুরআন পাঠ করে ‘খতম’ করি, অথচ একটি বারও তার অর্থ অনুধাবন ‘শুরু’ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি না। তাই সকলকে আহবান জানাই শুধু বেশি বেশি কুরআন ‘খতম’ করা নয়, বরং অর্থ জানা ও বুঝার চেষ্টা ‘আরম্ভ’ করি। উল্লেখ্য রমাযান হচ্ছে কুরআন নাযিলের মাস আর কুরআন হচ্ছে সুন্দর জীবন গঠনে আল্ল-হর মনোনীত একমাত্র নির্ভুল গ্রন্থ তাই

আমরা কি পারি না, প্রত্যেকে এ সিদ্ধান্ত নিতে জীবনে একবার হলেও কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থ বুঝে বুঝে তিলাওয়াত করব। শুরু করেই দেখুন না! আপনি অভিভূত হয়ে যাবেন। মনে হবে আপনি সত্যিই মহান আল্লা-হর সাথে সরাসরি কথা বলছেন আর আল্ল-হ আপনার সামনে উপস্থিত। আপনি যেন তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন। মনে হবে তাঁকে প্রশ্ন করছেন, তিনি উত্তর দিচ্ছেন। মনে হবে, আপনি নতুন করে ঈমান গ্রহন করলেন। আপনার বিশ্বাস হতে চাইবে না যে, এ কুরআন চৌদ্দশত বছর আগে অবতীর্ন হয়েছে। মনে হবে মাত্র কিছুক্ষণ আগে নাযিল হয়েছে। আল্ল-হ আমাদের কুরআন বুঝার ও সে অনুসারে চলার তাওফীক দিন। আমীন!

(সূত্রঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ওয়াল ঈমান)