বুধবার, ১৩ জুন, ২০১২

ওযু ও তায়াম্মুম-এর পদ্ধতি

সলাতের জন্য ওযু ফারয।

                                                             (তিরমিযী হাঃ ৭৫)
পানি না পেলে বা পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে তায়াম্মুম করতে হবে। ওযু ও তায়াম্মুম আরম্ভ করার সময় বিসমিল্লাহ্ বলতে হবে।


ওযু করার নিয়ম ও দু'আ

প্রথমে বিসমিল্লাহ্ বলতে হবে। (তিরমিযী হাঃ ২৫)
তারপর তিনবার উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত উত্তমরূপে ধুতে হবে। তিনবার কুলি করতে হবে। তিনবার নাকে পানি দিয়ে (বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়তে হবে) অথবা কুলি করার জন্য নেয়া পানি থেকে অর্ধেক দিয়ে কুলি করে বাকী অর্ধেক নাকে দিলেও চলবে। তারপর তিনবার মুখমণ্ডল (তথা চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নীচ ও উভয় কানের এবং চোখের কোণ পর্যন্ত) ধুতে হবে। দাড়ি থাকলে খিলাল করতে হবে। তারপর প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। তারপর মাথা এমনভাবে মাসাহ করতে হবে যে, হাতে নতুন পানি নিয়ে তা ঝেড়ে ফেলার পর উভয় হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগ একত্রে মিলিয়ে তা কপালের গোড়া থেকে সম্পূর্ণ মাথা হাতের তালু দিয়ে মোছার উদ্দেশ্যে হাতের তালু (মাথার শেষ থেকে) কপাল পর্যন্ত সমস্ত মাথা মাসাহ করতে হবে। এবপর শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা কান এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা কানের পিঠ মাসাহ করে সব শেষে প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত তিনবার (বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা খিলাল করে পায়ের আঙ্গুলগুলো) উত্তমরূপে ধুয়ে ফেলতে হবে। যাতে ওযুর কোন অঙ্গ শুকনা না থাকে।
এভাবে ওযু সম্পন্ন করতে হবে। (মিশকাত হাঃ ৩৬২, ৩৭২-৩৭৪, ৩৭৯, ৩৮২)

উল্লেখ্য ওযুর অঙ্গসমূহ দু'বার ও একবার করে ধোয়ার কথাও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (বুখারী হাঃ ১৫৪-১৫৫)


ওযু শেষে দু'আ


উচ্চারনঃ  আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাছুলুহু ।

অনুবাদঃ আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে , অল্লাহ ভিন্ন আর কেহই ইবাদতের উপযুক্ত নাই তিনি এক তাঁহার কোন অংশীদার নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দা এবং তাঁহার প্রেরিত নবী।

উচ্চারনঃ আল্ল-হুম্মাজ 'আলনী মিনাততাওওয়া-বীনা ওয়াজ'আলনী মিনাল মুতাত্বহহিরীর।

অনুবাদঃ হে আল্লহ! আমাকে তাওবাহকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর। (সহীহ তিরমিযী, মিশকাত হাঃ ২৮৯. ইরওয়া হাঃ ৯৬-এর আলোচনা দ্রঃ সনদ সহীহ, বুলূগুল মারাম হাঃ ৫৪)


ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ

১। প্রস্রাব ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে

২। যে সকল কারণে গোসল ফারয হয় তা ঘটলে

৩। বমি হলে

৪। ঘুমিয়ে পড়লে

৫। উটের গোশত খেলে

৬। আবরণ ছাড়া যৌনাঙ্গে হাত স্পর্শ হলে

৭। সঙ্গাহীন হয়ে পড়লে

৮। মাইয়েতের গোসল দিলে

৯। মযী (পাতলা বীর্য) বের হলে ওযু নষ্ট হয়ে যায়।
(বুখারী হাঃ ১৭৭, মুসলিম হাঃ ৭৬, ৮০, ৮১, বুলূগুল মারাম হাঃ ৭০/১১, তিরমিযী হাঃ ৮১, ৮৪)

উল্লেখ্য, সলাত অবস্থায় নাক দিয়ে রক্ত বের হলে (বুখারী হাঃ ১৩৪) এবং বিনা হেলানে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে (তিরমিযী হাঃ ৭৭) বাতকর্মের গন্ধ বা শব্দ না হলে, সলাতবস্থায় নাপাকী লাগলে ওযু নষ্ট হয় না। (বুখারী হাঃ ১৭২)


তায়াম্মুমের নিয়ম

‌'বিসমিল্লাহ' বলে পাক-পবিত্র ধূলা-মাটিতে উভয় হাত একবার মেরে দু'হাতে ফুঁ দিতে হবে। তারপর প্রথমে মুখমণ্ডল ও পরে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মুছতে হবে। এটাই তায়াম্মুম (বুখারী হাঃ ৩২৬, ৩২৭)

উল্লেখ্য ওযু ও তায়াম্মুম শেষে ওযুর দু'আ পড়তে হবে। ওযুর অংশ বিশেষ তিনবারের বেশি ধোয়া ঠিক নয়।

যদি কোন জুনুবী (নাপাক লোক যার উপর গোসল ফারয) অসুখের ভয় করে, কিংবা মরণের আশঙ্কা করে অথবা পিপাসার পানি ফুরিয়ে যাবার ভয় করে তাহলে সে তায়াম্মুম করতে পারে। (বুখারী হাঃ ৪৬৪)

যদি কেউ পানি না পায় এবং সলাত ছুটে যাবার ভয় থাকে তাহলে সে তায়াম্মুম করতে পারে। আল্লহ আমাদের সর্বাবস্থায় পবিত্রতা অবলম্বনের তাওফীক দান করুন। আমীন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন